পান্তা-ইলিশের খোলা চিঠি
– by আমিনুল ইসলাম
—————————–
প্রিয় ভোজন রসিক,
এটা পান্তা-ইলিশের কোন দাওয়াত পত্র নয়৷ সম্প্রতি পহেলা বৈশাখ এবং পান্তা-ইলিশ বিষয়ক জটিলতার সামান্য কিছু সংলাপ মাত্র। একজন ভাষাবিজ্ঞানী দীর্ঘ গবেষনায় জানতে পেরেছেন, পহেলা বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের কোন সম্পর্ক নেই। তার এই গবেষনার ফসল জাতীয় দৈনিকে শিরনাম হয়ে এসেছে। দাবী উঠেছে এই পান্তা-ইলিশ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। চমৎকার দাবী। কিন্ত তার আগে ইতিহাস খুজেঁ দেখা উচিত কে এই পান্তা-ইলিশের প্রচলন করেছেন। অতিতের ভূ্ল কাজের জন্য সবার বিচার হচ্ছে সুতরাং এদেরও কিছু হওয়া দরকার।
আজ থেকে ১৪১৮ বছর আগে তৎকালিন প্রাচীন বাংলার রাজা শশাঙ্ক যখন বাংলা বর্ষপঞ্জীর প্রবর্তন করেন তখন তিনি পান্তা-ইলিশের উৎসব নিয়ে কিছু বলেননি। সম্রাট আকবর বাংলা বর্ষপঞ্জীতে ষড় ঋতুর সংযোজন করে প্রজাদের সময়মত খাজনা দিতে বলেছেন। কিন্তু পান্তা-ইলিশ খাওয়ার কোন নির্দেশ দেননি। ১৯৫২-তে বাংলা ভাষার উপর আক্রমন হলেও বাংলা বর্ষপুঞ্জী অক্ষত ছিল। সে সময় ডঃ মোঃ শহিদুল্লাহ বাংলা বর্ষপুঞ্জীর শেষ সংশোধন বা সংস্কার করেন। দেরিতে হলেও স্বাধীন বাংলার সামরিক শাসক হুসেইন মোঃ এরশাদ ১৯৮৭ সালে সরকারিভাবে বাংলা পুঞ্জির ব্যবহার অনুমোদন করেন। তিনি গোপনে পান্তা-ইলিশের জাতীয়করন করেছিলেন কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি।
তাহলে কবে কখন বৈশাখে পান্তা-ইলিশের প্রচলন শুরু হয়েছিল? এ প্রশ্নের সম্ভবতঃ কোন জবাব নেই। তবে আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালী। আর ইলিশ মাছের রাজা। সুতরাং বহুকাল ধরেই আমরা ইলিশ মাছ খেয়ে আসছি। তা সে ইলিশ-পোলাও হোক, আর পান্তা-ইলিশ হোক, এটা নিয়ে ইতিহাস খোঁজার দরকার আছে কি? আসল সমস্যা এটা নয়। সমস্যা অন্যখানে।
পদ্মা-মেঘনা–যমুনা যেমন তোমার-আমার ঠিকানা তেমনি ইলিশ মাছেরও ঠিকানা এবং প্রজনন ক্ষেত্র। সাগরের লোনা জল পেড়িয়ে সুখ-সঙ্গম আর সন্তানের তাগিদে ওরা ছুটে আসে মিঠা পানির নদীতে। জন্ম নেয় অসংখ্য নবীন বা খোকা ইলিশ। তারুন্যে ঝলমল করে উঠে নদীর একুল-ওকুল।তারপর কোন এক বৈশাখী ঝড়ে থেমে যায় সব কোলাহল। মাটির সানকিতে পান্তার শীতল জলে ওদের দেখা যায় বৈশাখী মেলায়!! এ দুষ্ট চক্রটি বন্ধ হওয়া দরকার। সুতরাং দেরিতে হলেও বৈশাখে পান্তা-ইলিশ বন্ধের দাবি অর্থহীন নয়। কিন্তু শুধু প্রতিবাদ নয়। বিকল্প পন্থা আবিস্কার করে এর সুষ্ঠ বাস্তবায়ন দরকার। এই বিশাল আন্দলনে জনগণকে জাগিয়ে তোলা দরকার।
আজকের ডিজিটাল বিশ্বে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। একটা উদাহরন দিলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে যাবে। ভোজন রসিক শুভঙ্কর ইমেইলে মাটির সানকিতে করে সবাইকে পান্তা-ইলিশ উপহার পাঠিয়েছিল। পহেলা বৈশাখে এমন উপহার পেয়ে সবাই মহাখুশী। কিন্তু সমস্যা হোল এক অতি সংবেদনশীল কবিকে নিয়ে। রূপালি ইলিশের সুখ সঙ্গম সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। জাতীয় দৈনিকে তিনি খবরটা পরেছেন। বাঙ্গালী প্রতিবাদ করতে জানে। তাই প্রতিবাদ মিছিলে তিনি প্রথম কাতারে দাড়িয়েছেন। তার নব পরিণীতা স্ত্রীর কথা একবারও ভাবলেন না। আঁচলে চোখ মুছে বেচারা হয়ত বলেছে- “আমাদের এই প্রথম বৈশাখে তুমি কি সত্যি সত্যি ইলিশ খাওয়া ছেড়ে দিলে গো? অন্তত একটা পিস ইলিশ খাও!” কবি অনড়, পাহাড়ের মত অবিচল। শুভঙ্করকে লিখল- “ওহে শুভঙ্কর তোমার পান্তার সানকি থেকে ইলিশ মাছ উঠিয়ে নাও। আমি সইতে পারছিনা”।
বৈশাখের বিপুল উত্তেজনায় কবি তার স্ত্রীর কথা রেখেছেন কিনা – এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে শুভঙ্করকে ধন্যবাদ না জানালে অন্যায় করা হবে। কারন তিনি একজন কবিকে বিপ্লবী করে তুলতে পেরেছেন। চলুন আমরাও একসাথে গাই -এসো সত্য, এসো সুন্দর।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
( # রচনাটি লেখকের একান্তই ব্যক্তিগত চিন্তাধারা ও মতামত নির্ভর # Feature Photo- Courtesy-Wikipedia )