বাংলার জন্য ভালোবাসাekushwikipedia

by- কায়ছার আলম সরকার
———————————

রফিক অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছিল। চারদিক থেকে লাখ লাখ মানুষ খালি পায়ে শীতের কাপন উপেক্ষা করে ফুলের মালা নিয়ে এগিয়ে আসছে। সবাই শ্রদ্ধাবনত মস্তকে শহীদ মিনারে উঠে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। কি আবেগ, কি ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতার ছাপ সবার চোখে মুখে। এত মানুষ, কিন্তু সবাই কি সুশৃংখল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে আসছে। চারদিকে শত শত নিরাপত্তা কর্মীদেরকেও দেখা যাচ্ছে কুয়াশার চাঁদর ভেদ করে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। বলা তো যায় না, শ্রদ্ধা নিবেদন করার নাম করে সন্ত্রাসীরা মিশে আছে কিনা – শহীদ মিনারে ফুল দেয়া কে গুনাহের কাজ মনে করে কিছু গোষ্ঠী। রফিকের খুবই ভাল লাগছে। মানুষ আজও এত শ্রদ্ধা, এত ভালোবাসা, এত আবেগ জমিয়ে রেখেছে তাঁদের জন্য। নিজের জীবন বিসর্জন কে সার্থক লাগছে আজ। মুহূর্তের জন্য বন্দুকের নল থেকে ছুটে আসা গুলির কথা মনে পড়ল ওর। নিজের বিয়ের বাজার করে ঘরে ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু মায়ের ভাষার ডাকে সে সাড়া না দিয়ে পারেনি। মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলতে পারবে না, তা কি করে হয়। এত অন্যায়, এত অবিচার, অত শোষণ কি সহ্য করা যায় । প্রচণ্ড ভালবাসা, প্রচণ্ড আবেগ আর উত্তেজনা নিয়ে সব কিছু ভুলে সে মুহূর্তেই মিছিলে যোগ দেয়। কিন্তু আত্যাচারি শোষকের বুলেটে সব শেষ। হোল না তার স্নেহময়ী মায়ের কাছে ফিরে যাওয়া, হোল না তার বাবা ভাইদের সাথে মিছেলে অংশ নেয়ার গৌরবের গল্প বলা, হোল না তার হবু বউ পানুর ঘোমটা দেয়া মুখটা দেখা। অজান্তেই মনের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। কিন্তু আজকে মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এই বাধ ভাঙ্গা ঢল দেখে সে নিজেকে সামলাতে পারলো না, চোখের কোন ভিজে উঠল, কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়ে এলো । হঠাৎ করে পীঠে কার যেন আলতো হাতের স্পর্শ পেয়ে সে চমকে ফিরে তাকায়। কি আশ্চর্য বরকত কখন যেন ওর পাশে এসে দাড়িয়েছে।

কোমল গলায় শুধাল বরকত, খুব ভালো লাগছে, তাই না ।

‘হুম, এই দিনটির জন্যই তো সারাটা বছর অপেক্ষা করি। অন্য রকম ভালো লাগায় আবিষ্ট হই। মনে হয়, আমরা সার্থক, আমারা পেরেছি মায়ের মুখের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে।’

‘হ্যাঁ, আজ দেখো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, আমাদের অন্তরের ভিতর লুকিয়ে থাকা স্বপ্নের বীজ আজ বৃক্ষে পরিণত হয়েছে।’

দুজনে আনমনে মানুষের স্রোত দেখছিল। ভলোলাগা আর আবেগে আপ্লুত হচ্ছিল। হঠাৎ রফিক চেঁচিয়ে উঠে, আরে দেখ দেখ, সালাম ও জব্বারও চলে এসেছে আমাদের মতো। চল চল, ওদের সাথে কথা বলি।

দুজনে দৌড়াতে দৌড়াতে পৌঁছে যায় সালাম ও জব্বার এর কাছে। আঁটটি চোখ পরস্পরের সাথে ভাব বিনিময় করতে থাকে। কতো দিন পরে দেখা, আবেগের মাত্রা স্থিতিশীল হতে সময় লাগে ওদের। সবাই তাদের আনন্দাভুতি বর্ণনা করতে থাকে।

সালাম বলে, জানিস ২১ শে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করেছে।

বরকত বলে, সত্যিই, আমরা আজ অত্যন্ত আনন্দিত, সুখী এবং আবেগে উদ্বেলিত। আমাদের জীবন বিসর্জন সত্যিই আজ সার্থক হয়েছে।

একটু বিষণ্ণ স্বরে রফিক বলে, কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে আমার কিছুটা কষ্ট আছে। ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখটা অমর হয়ে আছে, কিন্তু ৮ই ফাল্গুন প্রচার পায়নি। অথচ উল্টাটাই হওয়া উচিৎ ছিল। এমনতো না যে বাংলা পঞ্জিকা তখন চালু ছিল না।

জব্বার সান্তনার স্বরে বলে, পরে কিন্তু ৮ই ফাল্গুনকে প্রচার করার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাধীনতার অনেক পরে অবশ্য। অফিস আদালতেও বাংলা পঞ্জিকা ব্যাবহার করার নির্দেশিকা আছে।

হঠাৎ বরকত প্রস্তাব দেয়, যাক এটা নিয়ে কষ্ট পেয়ে লাভ নেই। তার চেয়ে বরং চল সবাই মিলে পুরো দেশটা ঘুরে দেখি, স্বাধীনতার সুখ মানুষ কিভাবে ভোগ করছে কি তা দেখি।

জব্বার বলে, রফিককে নিয়ে তুই দেশটা ঘুরে দেখ। সালাম আর আমি বরং অস্ট্রেলিয়াতে যাই। সালাম আবার ক্যাঙ্গারু খুব পছন্দ করে।

চল, তাহলে যাওয়া যাক। সবাই এক সাথে বিদায় নেয়।

‘চিঠিটা তার পকেটে ছিল

ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা ।

মাগো ওরা বলে,

সবার কথা কেড়ে নেবে

তোমার কোলে শুয়ে

গল্প শুনতে দেবে না।

বলো, মা, তাই কি হয়?’

কলাবাগান এলাকার  এক ফ্লাট বাড়িতে এক যুবক তার ছোট ভাই বোনদেরকে আবৃতি করে শোনাচ্ছিল। ইউনিভার্সিটির  টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার পর বন্ধে গতকালই বাড়ি এসেছে সে। ছোট ভাই বোন দুটা খুব নেওটা হয়েছে ওর। বাড়ি আসলে সারাক্ষণ আশে পাশে ঘুর ঘুর করে আর নানান আবদার করে। একুশের বই মেলা থেকে ওদের জন্য অনেক বই নিয়ে এসেছে। সেখান থেকেই কবিতাটা শোনাচ্ছিল ওদেরকে। আবু জাফর ওবায়েদুল্লাহর লেখা, ওর খুব পছেন্দের কবিতা। এরি মধ্যে গরম গরম ভাপা পিঠা নিয়ে মা ঘরে এসে তাড়া দেয় সবাইকে পিঠা খাওয়ার জন্য। কতো দিন পর ছেলেটা তার বাড়ি এসেছে, সিলেটে হোস্টেলে কি আর ভালো মন্দ খেতে পারে। চোখ ছল ছল করে মায়ের। এমন দৃশ্য দেখে এবং এত সুন্দর কবিতা শুনে রফিক আর বরকত আনন্দে প্রায় কেঁদে ফেলে।

ধানমন্ডি এলাকার সুন্দর করে সাজানো ফ্যামিলি রুমে মধ্য বয়স্ক এক গৃহিণী খুব মনোযোগ দিয়ে টিভি তে হিন্দি সিরিয়াল দেখছিল। পাশের বাসার গৃহকত্রি তাকে সঙ্গ দিচ্ছে।

‘আপা, বাংলাদেশের নাটক, সিনেমা, টেলিফিল্ম সব গুলা কেমন যেন ভেজিট্যাঁবোল, বস্তা পচা, কোন নুতুণত্ব নেই। মোটেও ভালো লাগে না। নায়ক নায়িকা গুলাও দেখতে ভালো না। কেন যে এরা হিন্দি সিরিয়ালের মতো ভালো কিছু বানাতে পারে নে। কি বলেন আপা।’

‘তা কি আর বলতে। নইলে কি আর আমি পয়সা খরচ করে ক্যাবল লাইন নিয়ে হিন্দি সিরিয়াল আর নাচ দেখি। ওরা জানে কিভাবে নাচতে হয়, কি ভাবে অভিনয় করতে হয়। আর হিন্দি ভাষাটাও শুনতে খুব ভালো লাগে, কি যে মিষ্টি, কি যে সুমধুর। বাংলার মতো খটমটে না।’

‘কিন্তু, আপা, ওদের কাহিনী গুলা কেমন যেন মেকি মেকি। ঠিক আমাদের সাথে মেলে না। ওদের কালচার তো আমাদের মতো না।’

মেঝেতে বসে থাকা কাজের মেয়েটি যোগ দেয়, হ, খালা আম্মা, বাংলা সিনেমা হের চেয়ে ঢের বালা।

গৃহকত্রি ক্ষেপে উঠেন, চুপ কর, ছেমড়ি। তুই বাসন মাজা বাদ দিয়ে এখানে কি করছিস? বসে বসে বেতন নিতে চাস। যা, যা, কাজ কর গিয়ে।

মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় রফিকের। ভাবে, এ জন্যই কি তাঁরা প্রান দিয়েছিলেন। বরকত সান্তনা দিয়ে বলে, চল গুলশানের দিকে যাই। শুনেছি ওখানে অনেক উচ্চ শিক্ষিত লোক বাস করে। ওরা নিশ্চয় বাংলা ভাষার মর্যাদা দিতে জানে।

গুলশানের একটি অত্যাধুনিক বাসার study room এ হাই ভলিউমে  Mariah Carey এর গান বাজছে আর ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া হাফ প্যান্ট পরিহিত এক তরুণ গানের তালে তালে নাচছে।  হঠাৎ দরজায় নক হয়। যার পর নাই বিরক্ত হয়ে তরুণটি দরজা খুলে দেখে রংপুর থেকে আসা হাই স্কুলের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম সাহেব দরজায় দাড়িয়ে আছেন।

‘বাবা, একটু ভিতরে আসবো। তোমার তো দেখা পাওয়া দুস্কর। ’

‘কাম অন, আংকল। একচুয়ালী আমি সারা দিন খুবই বিজি থাকি, তাই আপনার সাথে কথা বলা হয়ে উঠে নি। তা আপনি আছেন তো কয়েকদিন।’

‘না বাবা, আজকেই চলে যাব। শিক্ষা সচিবের কাছে এসেছিলাম, স্কুলে ভালো একজন বাংলার শিক্ষক যেন নিয়োগ দেয় সেই ব্যাপারে কথা বলতে। ছাত্র ছাত্রী দেরকে ভালো করে বাংলা শিখাবে এমন কাউকে পাওয়া তো দুস্কর। সব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরাই তো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বিজ্ঞানের ভালো ভালো বিষয়ে পড়তে চায়। বাংলা তো কেউ পড়তেই চায়না। আর দরদ দিয়ে না পড়লে কি কিছু শেখা যায়।’

‘কি জানি আংকল, আমি আবার এসব কিছু বুঝি না। আমার কাছে মানি টাই সব।’

‘তা বাবা, তুমি দেখি সব সময় হিন্দি আর ইংরেজি গান শুনো। বাংলা গান মানে – রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, আধুনিক অনেক ভালো বাংলা গানও তো আছে – এগুলা শোন না?’

‘রবীন্দ্র ! You mean Tagore, নোপ আংকল, এগুলা আবার গান নাকি। না না এসব শুনি না। বন্ধু বান্ধবেরা খ্যাত,   গেরাইম্মা, আনস্মার্ট বলে। Hope you don’t mind।’

আর সহ্য করতে পারেন না রফিক ও বরকত। হু হু করে কেঁদে উঠে। ভাষা খুজে পায়না দুজনের কেউই । শুধু নির্বাক আপলক তাকেয়ে থাকে একে এপরের দিকে। শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা মানুষের ঢলের সাথে কিছুতেই নিজের চোখে দেখা এই দৃশ্য গুলা মিলাতে পারে না তাঁরা। তবে কি শহীদ মিনারে ফুল দেয়াটা শুধুই অভিনয়, লোক দেখানো আর ছলনা, সত্যিকারের ভালোবাসা নয়। শহীদ মিনারে কষ্ট করে ফুল না দিয়ে বরং সবাই যদি বাংলা ভাষাটাকে ভালোবাসত, লালন করত, হৃদয়ে ধারণ করত, চর্চা করত, ভাষার উন্নতির জন্য জীবন বাজি রাখে চেষ্টা করত (ভাষা তো একটা জীবন্ত প্রক্রিয়া, একে যত্ন করে লালন পালন করতে হয়) তবেই শহীদদের আত্মা সত্যিকারের খুশি হত। তাঁরা আর কিছুই ভাবতে পারে না। একসময় রফিক কোন রকমে বলে, চল বরকত ফিরে যাই।

সালাম ও জব্বার সাত সমুদ্দুর পাড়ি দিয়ে অবশেষে নিউক্যাসল এসে পোঁছায়। তখন সন্ধ্যা মিলিয়ে গেছে, চারদিকে  কোথাও কেউ নেই। ছিম ছাম ছোট্ট একটা বাড়ির ভিতরে রীম ও ঝীম কে বাংলা গল্প শোনাচ্ছিল নাহিদ । রীম ঝীম এর বয়স চার পার হয়েছে মাত্র। ওরা আবার বাবার কাছে গল্প না শুনে ঘুমাতেই পারে না।

রীম বলে, বাবা তুমি নাওমি হোমের মতো story বলো না কেন (ওরা ওদের Child Care Centre কে নাওমি Home বলে)?

‘আমার গল্প তোমরা লাইক করেো না?’

ঝীম যোগ করে, বাবা তোমার story আমারা very  লাইক করি, but তোমারটা different।

রীম বলে, নাওমি হোমে ওরা  বলে, Twinkle twinkle little stars, আর তুমি বল, আয় আয় চাঁদ মামা, টিপ দিয়ে যা।

নাহিদ বলে, আমার আদরের মা মণিরা, আমারা দুটা ভাষায় কথা বলতে পারি। একটা তোমাদের নানু, দাদু আর দাদী যে ভাষায় বলে, অন্যটা নাওমি Home এ যে ভাষায় বলে।’

‘Because, আমরা নানু দাদুর সাথে যাতে talk  করতে পারি।’

‘ঠিক তাই, এখন তোমরা ঘুমাও।’

‘না আমরা now sleep যাব না। It’s not dark yet. তুমি মুন মামা দেখাও, then sleep যাব।’ দুজনে এক সাথে বায়না করে।

‘ওকে, ওকে, দেখাব। ’

বলেই নাহিদ গভীর চিন্তায় ডুবে যায়। রীম ঝীম কে বাংলায় কথা বলার অভ্যাস রাখতে নীলা আর সে অনেক চেষ্টা করছে। রীম ঝীম ভালোই বাংলা বলতে পারে। ইংরেজি ও বাংলা শব্দ মিশিয়ে কি সুন্দর টুক টুক করে কথা বলে, শুনতে ভালোই লাগে।  কিন্তু ইদানিং সে লক্ষ্য করছে, যেদিন ওরা  Child Care Centre – এ যায়, তার পর দিন ওরা নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বাংলায় কথা বলতে ওদের শব্দ হাতড়াতে হয়। হঠাৎ বন্ধু মিজানের কথা মনে পড়লো নাহিদের। ওর খুব ভালো বন্ধু, বুয়েটে একই রুমে ছিল, এখন ঢাকাতেই ভালো চাকরী করে । কয়েকদিন আগে ইউরোপ ভ্রমনে গিয়েছিল মিজান। ফোনে অনেক কথা হোল, ওর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলো। অভিযোগের সুরে মিজান বলল, দোস্ত, ইউরোপের সব কিছুই ভালো লাগলো, কিন্তু একটা বিষয়ে খুব কষ্ট পেলাম। বন্ধু বান্ধব কারো ছেলে মেয়েরাই বাংলায় ঠিক মতো কথা বলতে পারে না। বাংলা না হলে কি আর আন্তরিক ভাবে কথা বলা যায়। তা, তোদের মেয়ে দুজন কি বাংলা বলতে পারে। নাহিদ ভাবে, রীম ঝীম তো শুধু আমাদের কাছ থেকে বাংলা শুনছে, খুব তাড়াতাড়ি ওদেরকে বাংলাদেশে নিতে হবে, তাহলে ভালো করে বাংলাটা শিখতে পারবে। আজ রাতে নীলা ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরলে এ নিয়ে আলোচণা করবে বলে ঠিক করলো সে।

সালাম ও জব্বার খুশি মনে চলে যায়। যাক বিদেশে এসেও বাংলা কথা শুনতে পেলাম, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে, ভাবলো ওরা।

বাবা মা রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। টেবিল সাজাতে সাজাতে মা ডাকে, জহির, জারা খেতে আস তোমরা। আমরা তোমাদের জন্য ডাইনিং টেবিলে বসে আছি।

Jahir said, ‘Hi Mum and Dad, you better have your dinner now. Zara and I will have our dinner later on. We are just playing a very interesting game on Play Station 3. We cannot wait but finishing it.’

জহির, তুমি তো ভালো বাংলা বলতে পারো। কিন্তু ইংরেজিতে বলছ কেন?

‘Come on, Mum. I feel more comfortable in English. My all friends, teachers, and all people here speak in English.  Even we all Bangladeshi friends speak in english when we meet together. TV, music, socialisation everything here is in English. At least I can understand what you say, can’t I?’

বাবা বলে, না তা ঠিক আছে। তবে বাংলার চর্চা না করলে তোমরা তোমাদের  Grandpa, Grandmum, Uncle, Aunty, Cousin দের সাথে ঠিক মতো কথা বলতে পারবে না, ওদের সাথে মিশতে পারবে না।

‘Oh Daddy, it seems to me a very hard language. We would like to learn Bangla. But you know, we leran English in school, but not Bangla. There is no one to teach us Bangla and we have very least resources to learn Bangla.’

বাবা বলে, আমারাই তোমাদেরকে শেখাতে পারি।

‘No worries Daddy, I might try next time in Bangla.’

‘বাবা আজই শুরু করো না।’

‘Ok, Mum and Dad, good night, have a nice sleep, see you in the morning’ বলেই দরজা বন্ধ করে দেয় সে।

মা বাবা মন খারাপ করে রাতের খাবার খেতে থাকে। ছেলে মেয়েরা খেতে না বসলে কি আর বাব মার খেতে ভালো লাগে। সালাম ও জব্বারের মনটাও খারাপ হয়ে যায়। ভাবে, আহা বেচারারা কতো একা, কতো অসহায়। এখানকার সমাজের সাথে নিজেদেরকে পুরাপুরি খাপ খাওয়াতে পারে না, আবার নিজের ছেলে মেয়েদের সাথেও বাংলাতে কথা বলতে পারে না।

শনিবার সকাল বেলা মিসেস ফিরোজ তার বিশাল family রুমে হারমোনিয়াম ও তবলা নিয়ে বসে ছেলেকে ডাকলেন।

‘আদি, বাবা, আসো। আগামী সপ্তাহের অনুষ্ঠানের জন্য গলা গরমটা সেরে ফেলি। বাংলা ভাষা নিয়ে অনুষ্ঠান তো তুমি খুব পছন্দ করো।’

‘আসছি মা। আমি একটা Lyrics কপি করছি। তুমি একটু বোস।’

‘It’s all right, my boy.’

একটু পরে আদি এসে family  রুমে ডুকলো । নেভি ব্লু জিন্স আর সাদা গেঞ্জিতে ওকে খুব স্মার্ট লাগছে। মা মুগ্ধ হয়ে ভাবছে, ছেলেটা আমার দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলো। দুদিন পর ইউনিভার্সিটিতে যাবে। আল্লাহ কে মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলেন মা।

‘মা, এই Lyrics টা একটু দেখতো, তোমার পছন্দ হয় কিনা। আমার খুব ভালো লেগেছে, যদিও দুএকটা যায়গায় ঠিক বুঝি নাই। তুমি বুঝিয়ে দিও।’

‘আদি, এটা তো আমার খুব পছন্দের গান, আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা। তুই এটা কোথায় পেলি? একটু কঠিন। আমার কিছুটা চর্চা আছে, কিন্তু তুই কি পারবি?’

‘ইউ টিউব থেকে নামিয়েছি মা। এত সুন্দর ভাষা আর কি আবেগ। তোমার সাথে চেষ্টা করলেো অবশ্যই পারবো, মা।’

মার মনটা খুব ভালো হয়ে যায়। বাংলা ভাষার জন্য তাঁর ছেলের ভালোবাসা দেখে উনি খুব খুশি হন। আনমনে ভাবতে থাকেন, অন্যদের ছেলে মেয়েরা যেখানে বাংলায় কথাই বলতে চায়না, সেখানে আদি নিজে থেকে কষ্ট করে বাংলা শিখছে, বাংলা বলছে, বাংলায় গান গাইছে, সবার প্রশংসা পাচ্ছে – এর চেয়ে সুখের আর গর্বের কি হতে পারে বাবা মায়ের জন্য।

‘কি ভাবছ, মা। আসো শুরু করি।’

হঠাৎ আদির কথায় মা সম্বিত ফিরে পান। বলেন, নাহ, কিছু না। আয় শুরু করি।

মা ও ছেলে দুজনে মিলে গলা সাধতে থাকে।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি

ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি

আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি’

সালাম ও জব্বারের মনটা খুব ভালো হয়ে যায়। বিদেশে থেকেও এরা যে কষ্ট করে বাংলা ভাষার অনুশীলন করছে তা ভাবতেই মন আনন্দে ভরে উঠে। চোখের কোনা ভিজে উঠে। হে আল্লাহ এদেরকে ভালোরাখো, সুস্থ সুখি রাখো, এই  বিদেশ বিভূঁইয়ে এরা যেন নির্বিঘ্নে  বাংলার চর্চা করতে পারে,  বাংলা ভাষা কে মর্যাদার আসনে বসাতে পারে, দুজনেই একসাথে প্রার্থনা করে।
——————————-
কোনরূপ পরিবর্তন/ পরিমার্জন ছাড়াই   রচনা-টি   প্রকাশিত হলো – BCF-এর কোনো সংস্লিষ্টতা বিহীন। ফিচার ছবি -wikipedia-এর সৌজন্যে)

বাংলার জন্য ভালোবাসা

Leave a Reply

slothttps://www.rajschool.com/slot onlinehttps://sai-ban.com/https://britoli.com/https://www.anabias.com/https://bcrbltd.com/https://s2aconsultingfze.com/https://rock-poker.com/https://koinhoki88.org/https://koinhoki88.net/https://rawsolla.com/https://koinhoki888.com/https://koinhoki88.com/https://infomedan.net/qqplazaslot gacorslot gacor koinhoki88slot gacor terbaru koinhoki88koinhoki88koinhoki88slot777https://usfinancehelp.com/https://collectingdiecasttoystoday.com/https://nyonyaguru.com/https://topindo-pulsa.com/https://gojekonline.com/https://dafrastar.com/https://www.reliantholdings.net/https://www.opalcitysview.com/https://lumarca.info/https://alt-qqaxioo.com/https://www.capuletlondon.com/https://www.tithaimart.com/https://www.trungvuongus.com/https://tropicalbioenergy.com/https://www.capitol-peak.com/https://pisswife.com/https://gamvipvn.com/https://www.elfutbolesnuestro.com/https://ampdsmart.com/https://schiffsilver.com/https://theicemall.com/https://shebenik.com/https://popvoxawards.com/https://www.adwebconsultancy.com/https://www.technotchsolutions.com/https://threekookaburras.com/https://marcjacobsonsale.com/https://www.forexrehberim.net/https://dreamlifefactory.com/https://www.videosocialcreative.com/https://www.oregonwetlands.net/https://www.americaneve.com/https://www.iamthelongtail.com/https://www.privatelivesbroadway.com/https://travelamateurs.com/https://sustaintheline.com/https://geekforcefive.com/https://galaksinews.com/https://sejutateknologi.com/https://harimausumateranews.com/https://diarysaham.com/https://lacakonline.com/https://undangansah.com/https://kottakkalayurvedapharmacy.com/https://kabforums.org/https://bhootmedia.com/https://erectie-goedkoop.com/https://heylink.me/Bandargaming-/https://qqcrownbos.com/https://eastofanfield.com/https://nyonyabesar.com/https://direktoriwisata.com/https://bbqburgersmore.com/https://bjwentkers.com/https://mareksmarcoisland.com/https://richmondhardware.com/https://technostrix.com/https://troostcoffeeandtea.com/https://malindoak.co.id/