সন্ধ্যা সমাগম প্রায়। স্কুল সংলগ্ন খেলার মাঠ। শেষ প্রান্তে একাকী দাঁড়িয়ে। দৃষ্টি পূর্বের স্বল্প দূরে প্লাট ফর্মের দিকে। একটা ট্রেন প্লাটফর্ম ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।
যাত্রীদের উঠা নামা সুস্পষ্ট দেখা যায়। কখন যেন সে প্লাটফর্মে পৌঁছে গেছে। প্ল্যাটফর্মে কোন ভীড় নেই। প্রতিটি যাত্রীর মুখ স্পষ্ট চেনা যাচ্ছে।
আস্তে আস্তে ট্রেন উত্তর দিকে চলে গেল। প্লাটফর্ম ফাঁকা। কিন্তু তাকে কোথাও দেখা গেল না। তবু আরো কিছু সময় দাঁড়িয়ে রল কার যেন আপেক্ষায়। কিন্তু কার অপেক্ষায়? নির্দিষ্ট কাউকে মনে করতে পারছিল না। কিন্তু অতি পরিচিত কটা মুখ বার বার চোখে ভেসে ওঠে।
পকেটে হাত দিয়ে অনুভব করতে পারে কিছু খুচরো পয়সার অস্তিত্ব। প্রবল ইচ্ছা হয়, কাছের বাজারে গিয়ে জর্দা দিয়ে পান খাবার।
ভেবেছিল আর নয়। যথেষ্ট পথ চেয়ে থেকেছে।
কিন্তু প্রতিদিন, অজান্তেই স্কুল মাঠের পাশে, নলকূপ বামে ফেলে একই ভঙ্গিমায় প্লাটফর্মের দিকে তাকিয়ে থাকে।
একদিন আগের মতোই, ট্রেনে যাত্রী উঠা নামা করে। ট্রেন নিজ গন্তব্যে চলতে থাকে। হঠাৎ মনে হয় কে একজন শেষের কামরার জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে।
আবারো ফিরে চলা নিজ আস্তানায়। আরো একটা দিনের অপেক্ষায় । সময় মন্দ কাটে না। পুরাতন ছবির এ্যালবাম।রবীন্দ্র, নজরুল ও শরৎ রচনাবলী মোটা মোটা বই পড়া এবং হারানো দিনের গান শুনা।
বিকেল হলেই, পূর্ব প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে সেই ষ্টেশানে দাঁড়িয়ে থাকা। অনেকেই দেখেও থাকবে হয়তো। তবে কেউ বিরক্ত করতে চায় না।
এমনি করে দিনের পর দিন, একই ভাবে ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে।
সেদিনো হযতো ফিরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু অবিশ্বাস্য ভাবে, লাল ছাতা ও শান্তিপুরী ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে। ট্রেন ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে কামরা থেকে সে প্লাটফর্মে নেমে আসে। সরাসরি তার সামনে। অবাক কান্ড সেই আগের মতোই চাঞ্চল্যতা, ঘন কাল চুল ক্লীপ দিয়ে আটকানো। বয়স একটুও বাড়েনি।
সালাম দিয়ে ব্যাগ হতে এরিনমোরের কৌটা হাতে তুলে দেয়। বলে “ব্যস্ততার জন্য আসতে দেরি হয়েছে। কিন্তু ঠিক ঠিক চিনতে পেরেছি”।
আমি খুবই ক্লান্ত, ক্ষুধা পেয়েছে। তোমার ওখানে খেয়ে একটানা ঘুম। সকালে স্কুলে যোগ দেব। মার ইচ্ছা ছিল স্কুলে পড়ানোর। তার ইচ্ছা আমি পূর্ণ করবো। এমনি করে প্রতীক্ষার শেষ। অভাবনীয় ভাবে সুন্দর সমাপ্তি ।
(Disclaimer : রচনা-টি কোনোরূপ পরিমার্জন/পরিবর্তন ছাড়াই প্রকাশিত হলো। এটি লেখকের একান্তই নিজস্ব মত /ভাবের বহি:প্রকাশ এবং BCF-এর কোনোরূপ সংশ্লিষ্টতা বিহীন। )